চতুর্থ অধ্যায় : উদ্ভিদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য
অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে জেনে রাখি
Øস্থায়ী অঞ্চল থেকে
মূলের শাখা ও প্রশাখা সৃষ্টি হয়।
Ø যে কান্ডের কোনো
শাখা হয় না কান্ডটি লম্বা হয়ে বেড়ে ওঠে এবং শীর্ষে পাতার
মুকুট থাকে তা অশাখ।
Ø খাদ্য তৈরির জন্য
পাতা কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন বের করে দেয়।
Ø যে পত্রে বৃন্তের
উপরে একটিমাত্র পত্রফলক থাকে তাকে সরল পত্র বলে।
Ø মূলত্র অঞ্চলের কাজ
আঘাত থেকে মূলকে রক্ষা করা।
Ø মরিচ গাছের ভ্রূণমূল
বৃদ্ধি পেয়ে সরাসরি মাটির ভেতর প্রবেশ করে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে। এজন্য মরিচ
গাছের মূলকে স্থানিক মূল বলা হয়।
Ø আমাদের চারপাশের
বিভিন্ন উদ্ভিদ বিভিন্ন রকম। কোনোটির মূল,
কান্ড, পাতা, ফুল, ফল ও বীজ থাকে। আবার কোনোটির থাকে না।
Ø যেসব উদ্ভিদে ফুল, ফল ও বীজ হয় তাদের সপুষ্পক উদ্ভিদ বলে।
Ø যেসব উদ্ভিদকে মূল, কান্ড, পাতা, ফুল ও ফল অংশে বিভক্ত করা যায় তাদের আদর্শ উদ্ভিদ বলে।
আবৃতবীজী সপুষ্পক উদ্ভিদই আদর্শ উদ্ভিদ।
Ø উৎপত্তি ও অবস্থান
অনুযায়ী মূল দুই প্রকার। যথা- স্থানিক মূল ও অস্থানিক মূল।
Ø শক্তি ও ধারণক্ষমতা
অনুযায়ী কান্ড দুই প্রকার। যথা- সবল কান্ড ও দুর্বল কান্ড।
Ø পত্রফলকের ভিত্তিতে
পাতা দুই প্রকার। যথা- সরলপত্র ও যৌগিকপত্র।
Ø মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি অসংখ্য প্রয়োজন মেটাতে উদ্ভিদের ওপর
নির্ভরশীল।
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
1) ফুলের কোন অংশ ফলে পরিণত হয় ?
উত্তর: ফুলের গর্ভাশয় ফলে পরিণত হয়।
2) পত্রফসল কাকে বলে ?
উত্তর: পত্র বৃন্তের উপরে চ্যাপ্টা সবুজ অংশটিকে পত্রফলক বলে।
3) বিষমপৃষ্ঠ পাতা কাকে বলে ?
উত্তর: যেসব গাছের পাতা চ্যাপ্টা,সবুজ এবং মাটির সাথে
সমান্তরালভাবে অবস্থান করে, তাকে বিষমপৃষ্ঠ পাতা
বলে।
4) মূলত্র কাকে বলে ?
উত্তর: মূলের শেষ প্রান্তে যে টুপির মতো অংশ থাকে তাকে মূলটুপি বা মূলত্র বলে।
5) দ্বিবিজপত্রী উদ্ভিদ কাকে বলে
?
উত্তর: যে সব উদ্ভিদের বীজে দুইটি বীজপত্র থাকে তাকে দ্বিবিজপত্রী উদ্ভিদ বলে।
6) পর্ব বা সন্ধি কাকে বলে ?
উত্তর: কান্ডের যে স্থান থেকে পাতা বের হয় তাকে পর্ব বা সন্ধি বলে।
7) শীর্ষ মুকুল কাকে বলে ?
উত্তর: কান্ড ও শাখার অগ্রভাগে যে মূকুল জন্মে তাকে শীর্ষ মুকুল বলে।
8) আরোহিণী কান্ড কোন উদ্ভিদে
দেখা যায় ?
উত্তর: বেত, শিম, পান ইত্যাদিতে আরোহিণী কান্ড দেখা যায়।
9) পত্রমূল কাকে বলে ?
উত্তর: পাতার যে অংশ কান্ড বা শাখা-প্রশাখার গায়ে যুক্ত থাকে তাকে পত্রমূল
বলে।
10) যৌগিক পত্রের র্যাকিস কী ?
উত্তর: যৌগিক পত্রের অণুফলকগুলো যে দন্ডে সাজানো থাকে তাকে র্যাকিস বা অক্ষ
বলে।
11) অস্থানিক মূল বরতে কী বোঝ ?
উত্তর: যেনব মূল ভ্রæণমুল থেকে উৎপন্ন না
হয়ে কান্ড ও পাতা থেকে উৎপন্ন হয় তাদেরকে অস্থানিক মূল বলে। অস্থানিক মূল
দু’ধরনের। যথা: ১.গুচ্ছ মূল ও ২. অগুচ্ছমূল।
12) যৌগিক পত্র বলতে কী বোছায় ?
উত্তর: যে পত্রের ফলকটি সম্পূর্ণভাবে খন্ডিত হয় এবং খন্ডিত অংশগুলো পরস্পর হতে
আলাদাভাকে অণুফলক সৃষ্টি করে তাকে যৌগিক পত্র বলে। যেমন- গোলাপ. নিম ইত্যাদি
উদ্ভিদের পত্র যৌগিক।
13) মূলের দুটি কাজ লেখো।
ক. মূল উদ্ভিদকে মাটির সাথে শক্ত করে আটকে রাখে।
খ. মূল মাটি থেকে পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করে।
14) কান্ডের দুটি কাজ লেখ।
উত্তর: কান্ডের দুটি কাজ হলো-
ক. পাতা ফুল –ফল এবং শাখা প্রশাখার ভার বহন করে।
খ. পাতায় প্রস্তুতকৃত খাদ্য এর মাধ্যমে দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
15) উপপত্র বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর: কোনো কোনো উদ্ভিদের পত্রমূলের পাতা থেকে ছোট যে পত্রসদৃশ অংশ বের হয়
তাদেরকে উপপত্র বলে। মটর গাছের পত্রমূলে এরূপ উপপত্র দেখা যায়।
16) প্রধান মূল থেকে কী উৎপন্ন হয়?
উত্তর : প্রধান মূল থেকে শাখা মূল
উৎপন্ন হয়।
17) একটি মূল কয়টি অঞ্চলে বিভক্ত?
উত্তর : একটি আদর্শ মূল ৪টি অঞ্চলে বিভক্ত।
18) স্থায়ী অঞ্চল থেকে কী সৃষ্টি
হয়?
উত্তর : স্থায়ী অঞ্চল থেকে মূলের শাখা ও প্রশাখা সৃষ্টি হয়।
19) আমগাছের মূল কোন ধরনের?
উত্তর : আমগাছের মূল স্থানিক মূল।
20) একটি আদর্শ সপুষ্পক উদ্ভিদ
কয়টি অংশে বিভক্ত?
উত্তর : একটি আদর্শ সপুষ্পক উদ্ভিদ পাঁচটি অংশে বিভক্ত।
21) কান্ডে কী কী
থাকে?
উত্তর : কান্ডে পর্ব, পর্বমধ্য ও শীর্ষ
মুকুল থাকে।
22) মূল কোথা থেকে উৎপন্ন হয়?
উত্তর : মূল ভ্রূণমূল থেকে উৎপন্ন হয়।
23) ভ্রূণমূল বৃদ্ধি পেয়ে কী গঠন
করে?
উত্তর : ভ্রূণমূল বৃদ্ধি পেয়ে প্রধান মূল গঠন করে।
24) অস্থানিক মূল কত ধরনের?
উত্তর : অস্থানিক মূল দু’ধরনের।
25) পত্রকক্ষ কী?
উত্তর : কান্ডের সাথে পাতা যে কোণ সৃষ্টি করে তাকে পত্রকক্ষ বলে।
26) শীর্ষমুকুল কাকে বলে?
উত্তর : কান্ডের বা শাখার অগ্রভাগে যে মুকুল জন্মে তাকে শীর্ষ মুকুল বলে।
27) অশাখ কী?
উত্তর : যে কান্ডের কোনো শাখা হয় না কান্ডটি লম্বা
হয়ে বেড়ে ওঠে এবং শীর্ষে পাতার মুকুট থাকে তা অশাখ।
28) ঘাসের কান্ড কী ধরনের?
উত্তর : ঘাসের কান্ড লতানো।
29) শয়ান কান্ড কালে বলে?
উত্তর : যেসব কান্ড মাটির উপরে ছড়িয়ে পড়ে কিন্তু
পর্ব থেকে মূল বের হয় না তাদের ট্রেইলার বা শয়ান কান্ড বলে।
30) কে গাছকে সূর্যের আলোর দিকে
তুলে ধরে?
উত্তর : কান্ড শাখা-প্রশাখা ও পাতাকে আলোর দিকে তুলে ধরে।
31) মধ্যশিরা কাকে বলে?
উত্তর : বৃন্তশীর্ষ থেকে যে মোটা শিরাটি ফলকের অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত
থাকে তাকে মধ্যশিরা বলে।
32) খাদ্য তৈরির জন্য পাতা কী
গ্রহণ করে আর কী বের করে দেয়?
উত্তর : খাদ্য তৈরির জন্য পাতা কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন বের
করে দেয়।
33) সরলপত্র কাকে বলে?
উত্তর : যে পত্রে বৃন্তের উপরে একটিমাত্র পত্রফলক থাকে তাকে সরল পত্র বলে।
34) বর্ধিষ্ণু অঞ্চলের কাজ কী?
উত্তর: বর্ধিষ্ণু অঞ্চলের কাজ মূলের বৃদ্ধি ঘটানো।
35) মূলরোম অঞ্চলের কাজ কী?
উত্তর: মূলরোম অঞ্চলের কাজ পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করা।
36) পত্রকের বিন্যাস অনুযায়ী
যৌগিক পত্র কত ধরনের?
উত্তর: পত্রকের বিন্যাস অনুযায়ী যৌগিক পত্র দু’ধরনের।
37) কোন ধরনের উদ্ভিদকে আদর্শ
উদ্ভিদ বলা হয়?
উত্তর: আবৃতবীজী সপুষ্পক উদ্ভিদকে আদর্শ উদ্ভিদ বলা হয়।
38) মূলত্র অঞ্চলের কাজ কী?
উত্তর: মূলত্র অঞ্চলের কাজ আঘাত থেকে মূলকে রক্ষা করা।
39) বাঁশ ও আখের কান্ডকে তৃণ কান্ড বলা হয় কেন?
উত্তর: বাঁশ ও আখের কান্ড পর্ব ও পর্বমধ্য খুবই স্পষ্ট।
পর্ব থেকে অস্থানিক মূল সৃষ্টি হতে দেখা যায়। ক্ষেত্র বিশেষে এসব কান্ডের পর্বগুলো
ফাঁপা বা ভরাট হতে পারে।
40) শিম গাছের কান্ডকে আরোহিণী
বলা হয় কেন?
উত্তর: শিম গাছের কান্ড কোনো অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরে
উপরের দিকে বেড়ে ওঠে বলে এদের ক্লাইম্বার বা আরোহিণী বলে।
41) উদ্ভিদের প্রতি যত্ন নেওয়া দরকার কেন?
উত্তর: উদ্ভিদ প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ। উদ্ভিদ আমাদের অনেক উপকার করে। এজন্য
উদ্ভিদের বেশি বেশি যতœ করা দরকার। অকারণে
কখনো গাছ কাটব না বা গাছের ডাল ভাঙব না।
42) মরিচ গাছের মূলকে স্থানিক মূল
বলা হয় কেন?
উত্তর : মরিচ গাছের ভ্রূণমূল বৃদ্ধি পেয়ে সরাসরি মাটির ভেতর প্রবেশ করে
শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে। এজন্য মরিচ গাছের মূলকে স্থানিক মূল বলা হয়।
43) ধান, ঘাস ও বাঁশের মূলকে গুচ্ছমূল বলা হয় কেন?
উত্তর : ধান, ঘাস ও বাঁশের মূলকে
গুচ্ছমূল বলা হয়। কারণ উদ্ভিদের মূল লক্ষ করলে দেখা যাবে যে, কান্ডের নিচের দিকে এক গুচ্ছ সরু মূল সৃষ্টি হয়েছে। এদের গুচ্ছমূল
বলে। ভ্রুণমূল নষ্ট হয়ে সে স্থান থেকেও গুচ্ছমূল উৎপন্ন হতে
পারে।
44) কেয়া গাছের মূলকে অগুচ্ছ মূল
বলা হয় কেন?
উত্তর : কেয়া গাছের মূল একত্রে গাদাগাদি করে গুচ্ছাকারে জন্মায় না বরং পরস্পর
থেকে আলাদা থাকে, এজন্য এর অগুচ্ছ মূল
বলে।
45) পর্বমধ্য বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : পর্বমধ্য বলতে পাশাপাশি দুটি পর্বের মধ্যবর্তী অংশকে বোঝায়। পর্বমধ্য
গাছকে খাড়া রাখতে ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পর্বমধ্য থেকে কোনো ধরনের মূল, পাতা বা শাখা সৃষ্টি হয় না।
46) পশু-পাখির প্রতি আমাদের কিরূপ
আচরণ করা প্রয়োজন?
উত্তর : পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া খুবই প্রয়োজন। গৃহপালিত পশু-পাখি আমাদের অনেক
উপকার করে। বনের পশুপাখিও প্রকৃতির সম্পদ। এদের যত্ন নিতে হবে। অনর্থক
পশুপাখি ধ্বংস করব না। অতিথি পাখি শিকার করব না। এ ব্যাপারে সবাইকে উৎসাহিত করা
দরকার।