অষ্টম অধ্যায়: রাসায়নিক
বিক্রিয়া
সারাংশ
§ প্রতীক: মৌলের পুরো নামের
সংক্ষিপ্ত রূপকে প্রতীক বলে। যেমন : হাইড্রোজেন (H), অক্সিজেন
(O), ক্যালসিয়াম
(Ca) ইত্যাদি।
§ সংকেত: কোনো
মৌল বা যৌগের অণুর সংক্ষিপ্ত রূপকে সংকেত বলে। যেমন: হাইড্রোজেন
(H2), হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl)।
§ যোজনী: কোনো
মৌলের একটি পরমাণু কয়টি হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে যুক্ত হয় তার সংখ্যাকে ঐ মৌলের
যোজনী বলে। যেমন: অক্সিজেন (O2) এর যোজনী 2,
নাইট্রোজেন এর যোজনী 3, ক্লোরিনের যোজনী 1.
§ র্যাডিকেল বা যৌগমূলক: যেসব
পরমাণুগুচ্ছ স্বাধীনভাবে থাকে না কিন্তু মৌলিক পদার্থের মতো যৌগ গঠনে অংশ নেয়
তাদের র্যাডিকেল বা যৌগমূলক বলে। যেমন : সালফেট SO42 -, অ্যামোনিয়াম
(NH4+) ইত্যাদি।
§ রাসায়নিক সমীকরণ: কোনো
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী বিক্রিয়কদ্রব্য এবং উৎপন্ন দ্রব্যকে প্রতীক,
সংকেত ও কতগুলো চিহ্নের (+, ® বা = ) সাহায্যে সংক্ষেপে প্রকাশ
করাকে রাসায়নিক সমীকরণ বলে। যেমন:
Zn + H2SO4 ¾® ZnSO4 + H2
(জিংক) (সালফিউরিক
এসিড) (জিঙ্ক সালফেট) (হাইড্রোজেন)
§ বিক্রিয়ক: রাসায়নিক বিক্রিয়া
সংঘটনের পূর্বে যেসব পদার্থ বিক্রিয়াস্থলে উপস্থিত থাকে এবং বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ
করে তাদের বিক্রিয়ক বলে। এরা তীর চিহ্নের (® বা সমান চিহ্নের (=) আগে বসে।
§ উৎপাদ: রাসায়নিক বিক্রিয়া
সংঘটনের পরে যেসব পদার্থ উৎপন্ন হয় তাদের উৎপাদ বলে। এরা তীর চিহ্নের (®) বা (=) সমান চিহ্নের পরে বসে।
§ সংযোজন বিক্রিয়া: যে রাসায়নিক
পরিবর্তনে একের অধিক পদার্থ একত্রিত হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন একটি রাসায়নিক
পদার্থ তৈরি করে তাকে সংযোজন বিক্রিয়া বলে। যেমন:
Fe + S ¾® FeS
(আয়রন) (সালফার) (আয়রন সালফাইড)
§ দহন বিক্রিয়া: যে রাসায়নিক
পরিবর্তনে কোনো বস্তু অক্সিজেনের সাহায্যে বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রজ্জ্বলিত শিখা,
ছাই ও অক্সাইড গ্যাস
উৎপন্ন করে তাকে দহন বিক্রিয়া বলে। যেমন :
2Mg + O2 ¾® 2MgO
(ম্যাগনেসিয়াম) (অক্সিজেন) (ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড)
§ প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া: যে
বিক্রিয়ায় একটি মৌল কোনো যৌগ থেকে অপর একটি মৌলকে সরিয়ে নিজে ঐ স্থান দখল করে নতুন
যৌগ তৈরি করে তাকে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া বলে। যেমন:
Fe + CuSO4 ¾® FeSO4 + Cu
(আয়রন) (কপার সালফেট) (আয়রন সালফেট) (কপার)
§ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপ শক্তির
রূপান্তর : যেকোনো দহন বিক্রিয়ায় বস্তুতে সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তি তাপশক্তি ও
আলোকশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
§ প্রশমন বিক্রিয়া: যে বিক্রিয়ায়
বিপরীতধর্মী পদার্থ একে অপরের সাথে বিক্রিয়া করে নিরপেক্ষ পদার্থ তৈরি করে তাকে
প্রশমন বিক্রিয়া (Neutralization
Reaction) বলে। যেমন :
চুন + এসিটিক এসিড ¾® ক্যালসিয়াম
এসিটেট + পানি
(ক্ষারীয়
পদার্থ) (অম্লীয় পদার্থ) (নিরপেক্ষ পদার্থ)
§ শুষ্ক কোষ: টর্চ লাইট, রিমোট কন্ট্রোল, বিভিন্ন রকম খেলনা ইত্যাদি
ক্ষেত্রে যে ব্যাটারি ব্যবহার করা হয় তাকে ড্রাই সেল বা শুষ্ক কোষ বলে।
§ তড়িৎ বিশ্লেষ্য: যে সকল পদার্থ তড়িৎ প্রবাহের ফলে রাসায়নিক
বিক্রিয়া করে অন্য পদার্থে পরিণত হয় তাদেরকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য বলে।
§ তড়িৎ বিশ্লেষণ: তড়িৎ পরিবহনের
ফলে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের রাসায়নিক পরিবর্তন ও অন্য পদার্থে পরিণত হওয়াকে তড়িৎ
বিশ্লেষণ বলে।
§ তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ: যে
সমস্ত পদার্থ দ্রবীভ‚ত বা বিগলিত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে না, ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়াও করে না,
তাদেরকে তড়িৎ অবিশ্লেষ্য
পদার্থ বলে। যেমন : চিনি, গøুকোজ ইত্যাদি।
সংক্ষিপ্ত
উত্তর প্রশ্ন
1) দহন বিক্রিয়া বলতে কী বুঝ? উদাহরণ দাও।
দহন বিক্রিয়া: যে রাসায়নিক পরিবর্তনে কোনো বস্তু অক্সিজেনের
সাহায্যে বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রজ্জ্বলিত শিখা, ছাই ও অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করে তাকে দহন বিক্রিয়া
বলে। যেমন :
2Mg + O2 ¾® 2MgO
(ম্যাগনেসিয়াম) (অক্সিজেন) (ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড)
2) প্রশমন বিক্রিয়া কী তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : যে বিক্রিয়ায় বিপরীতধর্মী পদার্থ একে অপরের সাথে
বিক্রিয়া করে নিরপেক্ষ পদার্থ তৈরি করে তাকে প্রশমন বিক্রিয়া বলে। যেমন :
চুন + এসিটিক এসিড ¾® ক্যালসিয়াম এসিটেট + পানি
এখানে, চুন
হলো ক্ষারীয় পদার্থ ও এসিটিক এসিড হলো অ¤øীয় পদার্থ আর উৎপাদিত ক্যালসিয়াম এসিটেট হলো নিরপেক্ষ
পদার্থ। কাজেই এ বিক্রিয়াটি একটি প্রশমন বিক্রিয়া।
3) চুনে পানি যোগ করলে কী ঘটে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সৃজনশীল ৩(খ) নং উত্তর দেখ।
4) তড়িৎ বিশ্লেষ্য ও তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থের মূল
পার্থক্য উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : নিচে তড়িৎ বিশ্লেষ্য ও তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থের
মধ্যে মূল পার্থক্য উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করা হলো :
তড়িৎ বিশ্লেষ্য |
তড়িৎ অবিশ্লেষ্য |
১. যেসব পদার্থ দ্রবীভ‚ত বা
বিগলিত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহনের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে অন্য পদার্থে পরিণত হয়,
তাদেরকে তড়িৎ
বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। যেমন: NaCl বা খাবার লবণ বিগলিত বা
দ্রবীভ‚ত অবস্থায় তড়িৎ প্রবাহের ফলে ধনাত্মক আয়ন Na+ ও ঋণাত্মক আয়ন Cl- এ বিশ্লিষ্ট হয়ে যায় নিম্নরূপে- NaCl ® Na+ +
Cl- 2Na+ + 2e- ® 2Na 2Cl-- 2e- ®
Cl2 |
১. যেসব পদার্থ দ্রবীভ‚ত বা বিগলিত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে না ফলে রাসায়নিক
বিক্রিয়াও করে না তাদের তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। যেমন : গøুকোজ, চিনি ইত্যাদি। এরা দ্রবণে বা
বিগলিত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে না। |
5) প্রতীক কী?
উত্তর: প্রতীক হলো মৌলের পুরো নামের সংক্ষিপ্তরূপ।
6) সংকেত কী?
উত্তর: কোনো মৌল বা যৌগের অণুর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো সংকেত।
যেমন হাইড্রোজেন অণুর সংকেত H2.
7) সংযোজন বিক্রিয়া কাকে বলে?
উত্তর : যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় দুই বা ততোধিক মৌলিক বা
যৌগিক পদার্থ পরস্পর বিক্রিয়া করে একটিমাত্র যৌগ উৎপন্ন করে তাকে সংযোজন বিক্রিয়া
বলে।
8) প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া কাকে বলে?
উত্তর : যে বিক্রিয়ায় একটি মৌল কোনো যৌগ থেকে অপর একটি
মৌলকে সরিয়ে নিজে ঐ স্থান দখল করে নতুন যৌগ তৈরি করে তাকে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া
বলে।
9) বিযোজন বিক্রিয়া কাকে বলে?
উত্তর : যে বিক্রিয়ায় একটি যৌগ ভেঙে একাধিক যৌগ উৎপন্ন হয়,
তাকে বিযোজন বিক্রিয়া
বলে।
10) শক্তির রূপান্তর কাকে বলে?
উত্তর : শক্তির এক রূপ থেকে আরেক রূপে পরিবর্তনকে শক্তির
রূপান্তর বলে।
11) শুষ্ক কোষ কাকে বলে?
উত্তর : তরল তড়িৎ বিশ্লেষ্যের পরিবর্তে পেস্ট ব্যবহার করে
যে কোষ গঠন করা হয় তাকে শুষ্ক কোষ বলে।
12) শুষ্ক কোষে শক্তির উৎস কী?
উত্তর : শুষ্ক কোষে শক্তির উৎস হলো এতে ব্যবহৃত রাসায়নিক
পদার্থ অর্থাৎ দস্তা, অ্যামোনিয়াম
ক্লোরাইড, কয়লার
গুঁড়া ও MnO2।
13) H ও H2 বলতে কী বুঝায়?
উত্তর: H দ্বারা হাইড্রোজেন মৌলের
প্রতীক বুঝায়। এটি হাইড্রোজেনের একটি পরমাণুকে নির্দেশ করে। H2 দ্বারা হাইড্রোজেনের একটি অণুকে প্রকাশ করে, যা দুটি পরমাণু নিয়ে গঠিত। এটি
হাইড্রোজেনের সংকেতও নির্দেশ করে।
14) দহনের বৈশিষ্ট্য কী কী?
উত্তর: দহনের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-
ক. দহনে
অক্সিজেন প্রয়োজন হয়।
খ. দহনের সময় প্রচুর তাপশক্তি ও আলোক শক্তি উৎপন্ন হয়।
গ. দহন দ্রুত রাসায়নিক প্রক্রিয়া।
15) মোমবাতি জ্বালালে কোন ধরনের পরিবর্তন ঘটে?
উত্তর : মোমবাতি জ্বালালে একই সাথে ভৌত ও রাসায়নিক
পরিবর্তন সংঘটিত হয়। মোমবাতিকে জ্বালালে উত্তাপে মোমের কিছু অংশ গলে যায়। এ গলা
মোম আবার ঠাণ্ডা হয়ে কঠিন মোমে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে ভৌত পরিবর্তন ঘটে। একই সাথে
মোম বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প, তাপ ও আলোক শক্তি তৈরি করে।
এক্ষেত্রে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে।
16) রান্নায় শক্তির কী ধরনের
পরিবর্তন হয়? ব্যাখ্যা
কর।
উত্তর : রান্নার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শক্তির দুই
ধরনের পরিবর্তন হয়। রান্না করার জন্য প্রথমে চুলা জ্বালানো হয়। চুলায় গ্যাস
জ্বালিয়ে তাপ উৎপন্ন করা হয়। আমরা জানি চুলায় আগুন জ্বালাতে যেসব উপকরণ লাগে তার
মধ্যে শক্তি রাসায়নিক শক্তিরূপে জমা থাকে। তাপ উৎপাদনের কারণে রাসায়নিক শক্তি
তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। আবার তাপের কারণে রান্না হয়। অর্থাৎ রান্নার মধ্যে
তাপশক্তি পুনরায় রাসায়নিক শক্তিরূপে জমা হয়। সুতরাং রান্নার দ্বারা শক্তি এক রূপ
থেকে আরেক রূপে রূপান্তরিত হয়।
17) তড়িৎ বিশ্লেষণে তড়িৎদ্বারের প্রয়োজন হয় কেন?
উত্তর : তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থে তড়িৎ পরিবহন করতে হলে
দ্রবণের মধ্যে একটি বৈদ্যুতিক বর্তনী সম্পূর্ণ করতে হয়। দ্রবণের মধ্যে বিদ্যুৎ
প্রবাহ চালনা করতে হলে দুটি ধাতব পাতের দরকার হয়। যার একটি দিয়ে বিদ্যুৎ কোষে
প্রবেশ করে এবং অন্যটি দিয়ে বের হয়ে যায়। এ তড়িৎ বিশ্লেষণে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালনা
করতে অবশ্যই তড়িৎদ্বার লাগবে।
18) গলিত NaCl
এ তড়িৎ বিশ্লেষণ চালনা করলে কী উৎপন্ন হয়?
উত্তর : গলিত NaCl -এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ বিশ্লেষণ চালনা করলে অ্যানোডে বা ধনাত্মক তড়িৎদ্বারে ক্লোরিন গ্যাস এবং ক্যাথোডে বা ঋণাত্মক তড়িৎদ্বারে সোডিয়াম ধাতু উৎপন্ন হয়।