ত্রয়োদশ অধ্যায় - খাদ্য ও পুষ্টি: বিষয় সংক্ষেপ ও সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
খাদ্য: খাদ্য বলতে সেই জৈব উপাদানকে বোঝায় যা জীবের দেহ গঠন ও শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
পুষ্টি: যে প্রক্রিয়াতে খাদ্যবস্তু খাওয়ার পরে পরিপাক হয় এবং জটিল খাদ্য উপাদানগুলো ভেঙে সরল উপাদানে পরিণত হয় তাকে পুষ্টি বলে।
পুষ্টিমান বা পুষ্টিমূল্য: কোন খাদ্যে কী পরিমাণ ও কত রকম খাদ্য উপাদান থাকে তার উপর নির্ভর করে ঐ খাদ্যের পুষ্টিমান বা পুষ্টিমূল্য।
বিশুদ্ধ খাদ্য: যে খাদ্যে শুধু একটি উপাদান থাকে, তাকে বিশুদ্ধ খাদ্য বলে। যেমন : চিনি, গøুকোজ। এতে শর্করা ছাড়া আর কোনো উপাদান থাকে না।
মিশ্র খাদ্য: যে খাদ্যে একের অধিক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। যেমন: দুধ, ডিম, খিচুরি, পেয়ারা ইত্যাদি।
খাদ্য উপাদান: উপাদান অনুযায়ী খাদ্যবস্তুকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যর্থাৎ ১. আমিষ, ২. শর্করা ও ৩. স্নেহ।
শর্করা: শর্করা শক্তি উৎপাদনকারী খাদ্য। এটি কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এই তিনটি মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। শর্করা তিন প্রকার। যর্থাৎ ১. মনোস্যাকরাইড, ২. দ্বি শর্করা ও ৩. বহু শর্করা।
আমিষ বা প্রোটিন: আমিষ হলো অ্যামাইনো এসিডের একটি জটিল যৌগ। এটি কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও সালফারের সমন্বয়ে গঠিত।
অ্যামাইনো এসিড: অ্যামাইনো এসিড দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও নাইট্রোজেনের সমতা রক্ষা করে। ২২টি অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায়।
সহজপাচ্যতার গুণক: আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করার পর এর শতকরা যত ভাগ অন্ত্র থেকে দেহে শোষিত হয় তত ভাগকে সেই আমিষের সহজপাচ্যতার গুণক ধরা হয়।
স্নেহ পদার্থ: স্নেহ পদার্থ ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলের সমন্বয়ে গঠিত হয়। স্নেহ পদার্থে ২০ প্রকার চর্বি জাতীয় এসিড পাওয়া যায়। চর্বি জাতীয় এসিড দুই প্রকার। যর্থাৎ ১. অসম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় এসিড এবং ২. সম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় এসিড।
মৌল বিপাক: বিপাক ক্রিয়া চালানোর জন্য যে শক্তি প্রয়োজন তাকে মৌলবিপাক বলে।
খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন: যেসব জৈব রাসায়নিক পদার্থ খাদ্যে সামান্য পরিমাণে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন ক্রিয়ায় পরোক্ষভাবে সাহায্য করে তাদের ভিটামিন বলে।
খনিজ লবণ: দেহকোষ ও দেহ তরলের জন্য খনিজ লবণ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। প্রধানত দুই ভাবে খনিজ লবণ দেহে কাজ করে। যর্থাৎ দেহ গঠন উপাদানরূপে ও দেহ অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
পানি: প্রাণীদেহের ৬০-৭০ ভাগই পানি। তাই দেহগঠনে পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
শুষ্কতা: কোনো কারণে দেহে পানির পরিমাণ কমে গেলে কোষগুলোতে পানির স্বল্পতা দেখা দেয়। একে বলে শুষ্কতা।
রাফেজ বা আঁশযুক্ত খাদ্য: শস্যদানা, ফলমূল, সবজির অপাচ্য অংশকে রাফেজ বলে। এটি কোনো পুষ্টি উপাদান নয়। তবে দেহের বর্জ্য পদার্থ নিস্কাশনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
1) বয়স্কদের রিকেটস কী নামে পরিচিত?
উত্তরঃ অস্টম্যালেশিয়া
2) বুকের হাড় বা পাজরের হাড় বেকে যাওয়া কোন রোগের লক্ষণ?
উত্তরঃ রিকেটস।
3) জেরপথালমিয়া কোন ভিটামিনের অভাবে হয়?
উত্তরঃ ভিটামিন এ
4) স্নেহ জাতীয় পদার্থে কোন কোন ভিটামিন দ্রবণীয়?
উত্তরঃ এ, ডি, ই এবং কে।
5) খাদ্য থেকে দেহের ভেতর যে তাপ উৎপন্ন হয় তা আমরা কীসে প্রকাশ করি।
উত্তরঃ কিলোক্যালরিতে
6) স্নেহ পদার্থ কীসের সমন্বয়ে গঠিত?
উত্তরঃ ফ্যাটি এসিড ও গিøসারল।
7) গ্লুকোজ কী?
উত্তরঃ এক ধরনের শর্করা
8) রাফেজ কী?
উত্তরঃ শস্যদানা ফলমূল ও শাক সবজির অপাচ্য অংশই রাফেজ।
9) পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন কোনটি?
উত্তরঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও সি।
10) ক্রোটিনিজম রোগ কীসের অভাবে হয়।
উত্তরঃ আয়োডিন
11) মানবদেহে কী পরিমাণ শকরা জমাথাকে?
উত্তরঃ ৩০০-৪০০ গ্রাম।
12) পুষ্টি কাকে বলে?
উত্তরঃ পুষ্টি হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আমাদের শরীর খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করে, যাতে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা, বৃদ্ধি, শক্তি উৎপাদন এবং শরীরের কাজকর্ম ঠিকভাবে চলতে পারে।
13) সিদ্ধ চালে কোন উপাদান বেশি থাকে?
উত্তরঃ সিদ্ধ চালে শ্বেতসারের পরিমাণ বেশি থাকে।
14) মৌল বিপাক কাকে বলে?
উত্তরঃ বিপাক ক্রিয়া চালানোর জন্য যে শক্তি প্রয়োজন তাকে মৌল বিপাক বলে।
15) শক্তিদায়ক খাদ্য উপাদান কী?
উত্তরঃ শক্তিদায়ক খাদ্য উপাদান শর্করা
16) সুষম খাদ্য কী?
উত্তরঃ যে সমস্ত খাদ্য বস্তু দেহে ক্যালরি র চাহিদা পূরন করে টিস্যু কোষের বৃদ্ধি ওগঠন বজায় রাখে এবং দেহের শরীর বৃত্তীয় কার্যাবলিকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাকে সুষম খাদ্য বলে।
17) ভিটামিন কাকে বলে?
উত্তরঃ খাদ্যে উপস্থিত জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা খাদ্যে অতিসামন্য পরিমাণে উপস্থিত থেকে বিপাকক্রিয়ায় উৎসেচকের সাথে কো এনজাইম হিসেবে কাজ করে তাকে ভিটামিন বলে।
18) খাদ্য উপাদান কাকে বলে?
উত্তরঃ খাদ্য যে সকল রাসায়নিক উপাদান দিয়ে গঠিত তাদেরকে খাদ্য উপাদান বলে।
19) মৌল বিপাক কী?
উত্তরঃ বিপাকক্রিয়া চালানোর জন্য যে শক্তি প্রয়োজন তাকে মৌল বিপাক বলে।
20) ভিটামিন কে এর উৎস কী?
উত্তরঃ ভিটামিন কে এর উৎস হলো বাধাকপি পালংশাক টমেটো দুধ মাখন ঘি ইত্যাদি।
21) বিশুদ্ধ খাদ্য কী?
উত্তরঃ যে খাদ্যে শুধুমাত্র একটি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে তাকে বিশুদ্ধ খাদ্য বলে।
22) মিশ্র খাদ্য কাকে বলে?
উত্তরঃ যে খাদ্য একের অধিক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে তাকে মিশ্র খাদ্য বলে। যেমন – খিচুড়ি
23) গলগন্ড রোগের লক্ষন কী?
উত্তরঃ গলায় অবস্থিত থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যায়। গলার আওয়াজ ফ্যাসফেসে হয় এবং খাবার গিলতে অসুবিধা হয়।
24) পুষ্টিমান বা পুস্টিমুল্য কী?
উত্তরঃ কোনো খাদ্য কী পরিমাণ এবং কতরকম খাদ্য উপাদান নিহিত আছে তার সমন্বিত গুণাগুনই ওই খাদ্যের পুষ্টিমান বা পুষ্টিমূল্য।
25) ক্রোটিনিজম কী?
উত্তরঃ দেহে আয়োডিনের অভাবজনিত একটি রোগ। এটি শিশুদের হয়।
26) চর্বি জাতীয় এসিডসমূহের নাম কী?
উত্তরঃ চর্বি জাতীয় এসিড দুই প্রকার। যথা- অসম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় এসিড সম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় এসিড।
27) শর্করা জাতয়ি খাদ্যে কয়টি মৌল রযেছে?
উত্তরঃ শর্করা জাতীয় খাদ্যে কার্বন হাইড্রোজেন অক্সিজেন তিনটি মৌল রয়েছে।
28) কোন ধরনের খাদ্য দেহে ক্ষয়পুরণ ও বৃদ্ধি সাধন করে?
উত্তরঃ খাদ্যপ্রান বা ভিটামিন দেহে ক্ষয়পুরন ও বৃদ্ধি সাধান করে।
29) এক গ্রাম শর্করা থেকে কত কিলোক্যালরি তাপ উৎপন্ন হয়।
উত্তরঃ ১ গ্রাম শর্করা থেকে ৪ কিলোক্যালরি তাপ উৎপন্ন হয়।
30) উপাদান অনুযায়ী খাদ্য বস্তুকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়।
উত্তরঃ উপাদান অনুযায়ী খাদ্য বস্তুকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
31) খাদ্যের উপাদানগুলোর নাম লিখ?
উত্তরঃ খাদ্যের উপাদানগুলো হলো- র্শকরা, আমিষ, স্নেহ, খনিজ, লবণ, ভিটামিন ও পানি।
32) প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় শাকসবজি রাখা প্রয়োজন কেন?
উত্তরঃ অন্যান্য খাদ্যের তুলনায় শাকসবজির রাফেজের পরিমাণ বেশি। রাফেজযুক্ত খাবার মল উৎপাদন ও নিষ্কাশনে সহায়তা করে। এ জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি রাখা প্রয়োজন।
33) শিশুদের কিছুক্ষণ রোদে রাখা উচিত কেন?
উত্তরঃ সকালের হালকা রোদে নবজাতক শিশুকে রাখা অথবা সকল বয়সের শিশুকে কিছুক্ষণ রোদ্রে খেলাধূলা করতে দেওয়া উচিত কারণ সূর্য থেকে ভিটামিন ডি তৈরি হয়।
34) এ্যানিমিয়া কেন হয়?
উত্তরঃ লোহা আমাদের দেহে রক্তের লোহিত কণিকার হিমোগ্লোবিন নামক উপাদানটির গঠনের উপাদান। দেহে লোহার ঘাটতি হলে কৃমির উপদ্রব হলে দেহে এ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে।
35) কোনলক্ষনগুলো অস্টিওম্যালেশিয়া রোগীর মধ্যে দেখা যায়?
উত্তরঃ অস্থি দুর্বল থাইরয়েড গ্রন্থির কাজের পরিবর্তন ক্যালসিয়াম শোষনে বিঘ্ন ঘটে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের সঞ্চয় দেহে অত্যন্ত কমে যাবে ইত্যাদি।
36) কোন ধরনের খাদ্য ভিটামিন ডি আছে?
উত্তরঃ ভোজ্য তেল দুদ পনির ছানা মাছের তেল ডিমের কুসুম মাখন চর্বি ঘি ইত্যাদিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
37) কোন খাদ্যের পুষ্টিমান কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
উত্তরঃকোন খাদ্যে কি পরিমাণ এবং কত রকম খাদ্য উপাদান বিদ্যমান থাকে তার উপর নির্ভর করে ওই খাদ্যের পুষ্টিমান নির্ণয় করা হয়।
38) দেহে এমাইনো এসিডের প্রয়োজন কেন?
উত্তরঃ দেহের জন্য অ্যামাইনো এসিডের কারণ আমিষ হলেঅ অ্যামাইনো অ্যাসিডের জটিল যৌগ যা পরিপাক প্রক্রিয়ায় দেহে শোষণ উপযোগী সরল এমাইনো এসিডে পরিণতকরে। অথার্ৎআমিষ পরিপাক হওয়ার পর অ্যামাইনো অ্যাসিডে পরিণত হয় অ্যামাইনো অ্যাসিড নাইট্রোজেন দ্বারা গঠিত যৌগ অ্যামাইনো অ্যাসিড দেহের বৃদ্ধি ক্ষয়পূরণ ও নাইট্রোজনের সমতা রক্ষার জন্য অত্যান্ত প্রয়োজন।
39) মানবদেহে খনিজ লবণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ খনিজ লবণ দেহ গঠন ও দেহের অভ্যন্তরীন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। অস্থি দাত এনজাইম ও হরমোন গঠনের জন্য খনিজ লবণ অপরিহার্য উপাদান। এছাড়া স্নায়ু উদ্দীপনা ও পেশি সংকোচন নিয়ন্ত্রণ দেহের জলীয় অংশে সমতা রক্ষা করে ও বিভিন্ন এনজাইম সক্রিয় রাখে। এ কারণে খনিজ লবন আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজন।
40) চাল একটি শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ সেদ্ধ চালে ৭৯% শ্বেতসার ৬% স্নেহ পদার্থ থাকে। এছাড়াও সামান্য পরিমাণ আমিষ ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে। ১০০ গ্রাম চাল থেকে প্রায় ৩৪৫-৩৪৯ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।সেদ্ধ চালে আমিষ, ভিটামিন, স্নেহ পদার্থ থাকলেও শ্বেতসারের পরিমাণ বেশি থাকে। কাজেই চাল একটি শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য।
41) দেহের জন্য ভিটামিন কেন দরকারী উপাদান?
উত্তরঃ ভিটামিনসমূহ প্রত্যক্ষভাবে দেহ গঠনে অংশগ্রহন না করলেও এদের অবোবে দেহের ক্ষয়পূরন বৃদ্ধিসাধন বা দেহে তাপ ও শক্তি উৎপাদন ইত্যাদি বিভিন্ন ক্রিয়াগুলো সুসম্পন্ন হতে পারে না। জীবদেহের বিভিন্ন অভ্যন্তরীন ক্রিয়াকলাপ এদের সাহায্যে নিয়ন্ত্রিতহয়।
42) কিলোক্যালরি কী?
উত্তর : কিলোক্যালরি হলো খাদ্যে তাপশক্তি মাপার একক। ১০০০ ক্যালরিতে ১ কিলোক্যালরি হয়। দেহ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে কী পরিমাণ শক্তি লাগবে তা কিলোক্যালরি একক থেকে নির্ণয় করা হয়।
43) ভিটামিন ‘এ’-র অভাবে কী কী অসুবিধা দেখা দেয়?
উত্তর : ভিটামিন ‘এ’-র অভাবে রাতকানা রোগ হয়। এর অভাব দীর্ঘস্থায়ী হলে জেরপথালমিয়া রোগ দেখা দেয়। এতে ব্যক্তি পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া এর অভাবে দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। অনেক সময় সর্দি, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ হতে পারে।
44) রিকেটস রোগের লক্ষণগুলো কী কী?
উত্তর : ভিটামিন ‘ডি’ ও ক্যালসিয়ামের অভাবে রিকেটস রোগ হয়। এ রোগের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ :
১. রিকেটস রোগে শিশুদের হাড় নরম হয় এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
২. পায়ের হাড় ধনুকের মতো বেঁকে যায় এবং দেহের চাপে অন্যান্য হাড়গুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৩. হাত-পায়ের অস্থিসন্ধি বা গিঁট ফুলে যায়।
৪. বুকের বা পাঁজরের হাড় বেঁকে যায়।
45) রক্তে হিমোগ্লোবিনের প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর : রক্তে হিমোগ্লোবিন নামক লৌহঘটিত প্রোটিন জাতীয় রঞ্জক পদার্থ থাকায় রক্তের রং লাল হয়। হিমোগ্লোবিন অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিন যৌগ গঠন করে অক্সিজেন পরিবহন করে এবং কার্বন-ডাইঅক্সাইডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কার্বো-অ্যামাইনো হিমোগ্লোবিন যৌগ গঠন করে কার্বন-ডাইঅক্সাইড পরিবহন করে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
46) বিশুদ্ধ খাদ্য কাকে বলে?
উত্তর: যে খাদ্যে শুধুমাত্র একটি উপাদানই থাকে তাকে বিশুদ্ধ খাদ্য বলে।
47) মিশ্র খাদ্য কাকে বলে?
উত্তর: যে খাদ্যে একের অধিক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে তাকে মিশ্র খাদ্য বলে।
48) শর্করা কী কী উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত?
উত্তর : শর্করা কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এ তিনটি মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত।
49) কোন শর্করা রক্তের মাধ্যমে সারা দেহে পরিবাহিত হয়?
উত্তর : গ্লুকোজ রক্তের মাধ্যমে সার দেহে পরিবাহিত হয়।
50) আমাদের ক্যালরির শতকরা কত ভাগ শর্করা থেকে গ্রহণ করা দরকার?
উত্তর : আমাদের ক্যালরির শতকরা ৬০-৭০ ভাগ শর্করা থেকে গ্রহণ করা দরকার।
51) আমিষের অভাবে কী রোগ দেখা দেয়?
উত্তর : আমিষের অভাবে কোয়াশিয়রকর ও মেরাসমাস রোগ দেখা দেয়।
52) স্নেহ পদার্থ পরিপাক হয়ে কিসে পরিণত হয়?
উত্তর : স্নেহ পদার্থ পরিপাক হয়ে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত হয়।
53) জেরপথালমিয়া রোগে চোখের কী ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
উত্তর : জেরপথালমিয়া রোগে চোখের কর্নিয়ার আচ্ছাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
54) ভিটামিন ডি এর অভাবে বয়স্কদের কী রোগ হয়?
উত্তর : ভিটামিন ডি-এর অভাবে বয়স্কদের অস্টিওম্যালেশিয়া রোগ হয়।
55) দেহের প্রথ্রোম্বিন নামক প্রোটিন কোন ভিটামিন তৈরি করে?
উত্তর : দেহে প্রথ্রোম্বিন নামক প্রোটিন ভিটামিন কে তৈরি করে।
56) খাদ্যের কী কী কাজ পুষ্টি প্রক্রিয়ার অন্তর্গত?
57) ত্তর : পুষ্টি প্রক্রিয়াতে খাদ্যবস্তু খাওয়ার পরে পরিপাক হয় এবং জটিল খাদ্য উপাদানগুলো ভেঙে সরল উপাদানে পরিণত হয় তা দেহ শোষণ করে নেয়। শোষণের পরে দেহের সকল অঙ্গের ক্ষয়প্রাপ্ত কোষের পুনর্গঠন ও দেহের বৃদ্ধির জন্য নতুন কোষ গঠন করে। তাছাড়া তাপ উৎপাদন, রোগ-প্রতিরোধ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পুষ্টি জোগায়। দেহে খাদ্যের এই সকল কাজই পুষ্টি প্রক্রিয়ার অন্তর্গত।
58) চালকে শ্বেতসার জাতীয় পদার্থ কেন বলা হয়?
উত্তর : সেদ্ধ চালে ৭৯% শ্বেতসার ও ৬% স্নেহ পদার্থ থাকে। এছাড়া, সামান্য পরিমাণ আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে। সেদ্ধ চালে শ্বেতসারের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই চাল কে শ্বেতসার জাতীয় পদার্থ বলা হয়।
59) একজন লোকের দৈনিক কী পরিমাণ শক্তির দরকার তা কী কী বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর : একজন লোকের দৈনিক কী পরিমাণ শক্তির দরকার তা প্রধানত তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যথা : ১ মৌলবিপাক, ২. দৈহিক পরিশ্রম ও ৩. খাদ্যের প্রভাব।
60) খাদ্য নির্বাচনের সময় আমাদের কী বিষয় লক্ষ রাখতে হবে?
উত্তর : খাদ্য নির্বাচনের সময় আমাদের লক্ষ রাখতে হবে যে, খাদ্য থেকে দেহ যেন প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্যালরি পেতে পারে এবং ভিটামিন, খনিজ লবণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো যেন এতে থাকে।
61) ভিটামিন এ-এর উৎস কী কী?
উত্তর : মাছের তেল ও প্রাণিজ স্নেহে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। ক্যারোটিনসমৃদ্ধ শাক-সবজি যেমন : লালশাক, পুঁইশাক, পালংশাক, টমেটো, গাজর, বীট, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি ভিটামিন এ-এর ভালো উৎস। বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন : পেঁপে, আম ও কাঁঠালে ভিটামিন এ থাকে। মলা ও ঢেলা মাছে ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে।
62) দেহে ভিটামিনের কাজ কী?
উত্তর: দেহে ভিটামিনের কাজ হলো :
১. দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখা;
২. ত্বক ও শ্লেষ্মাঝিলিকে সুস্থ রাখা এবং দেহকে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের হাত থেকে রক্ষা করা;
৩. খাদ্যদ্রব্য পরিপাক ও ক্ষুধার উদ্রেক করা;
৪. রক্তের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখা;
৫. দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।
63) দেহে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স গোষ্ঠীর কাজ কী?
উত্তর : দেহে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স গোষ্ঠীর কাজ হলো বিশেষ বিশেষ উৎসেচকের অংশ হিসেবে আমিষ, শর্করা ও স্নেহ পদার্থকে বিশ্লিষ্ট করা এবং এদের অন্তর্নিহিত শক্তিকে মুক্ত হতে সাহায্য করা।