৯ম ও ১০ম শ্রেণির অর্থনীতি ষষ্ঠ অধ্যায়: জাতীয় আয় ও এর পরিমাপ- বিষয় সংক্ষেপ এবং সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন

9ম ও 10ম শ্রেণির অর্থনীতি ষষ্ঠ অধ্যায়: জাতীয় আয় ও এর পরিমাপ

৯ম ও ১০ম শ্রেণির অর্থনীতি ষষ্ঠ অধ্যায় জাতীয় আয় ও এর পরিমাপ- বিষয় সংক্ষেপ এবং সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন

বিষয় সংক্ষেপ

Ø জাতীয় আয়ের ধারণাসমূহ : জাতীয় আয়ে ধারণাসমূহের মধ্যে রয়েছে :

Ø মোট দেশজ উৎপাদ: একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে একটি দেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে মোট যে পরিমাণ চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবা উৎপাদিত হয় তার বাজার দামের সমষ্টিকে মোট দেশজ উৎপাদ বা GDP বলে।

Ø মোট জাতীয় আয়: কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত আর্থিক বছরে কোনো দেশের নাগরিকগণ কর্তৃক যে পরিমাণ চ‚ড়ান্ত দ্রব্য ও সেবা উৎপন্ন হয় তার বাজার মূল্যের সমষ্টিকে মোট জাতীয় আয় (GNI) বলে।

Ø নিট জাতীয় আয়: কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো অর্থনীতিতে চূড়ান্ত পর্যায়ের দ্রব্য ও সেবার আর্থিক মূল্য থেকে মূলধন ব্যবহারজনিত অবচয় ব্যয় (Capital Consumption Allowance বা CCA বা Depreciation) বাদ দিলে যা থাকে তাকে নিট জাতীয় আয় বলে।

Ø জাতীয় আয় পরিমাপ পদ্ধতিসমূহ : জাতীয় আয় মূলত তিনভাবে পরিমাপ করা যায়। যথা : উৎপাদন পদ্ধতি (Production Approach), আয় পদ্ধতি (Income Approach) ও ব্যয় পদ্ধতি (Expenditure Approach)।

Ø জিডিপির নির্ধারকসমূহ: মোট দেশজ উৎপাদ কত হবে তা নির্ভর করে দেশের ভুমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ, শ্রম, মূলধন, প্রযুক্তি, সম্পদের সচলতা ইত্যাদির ওপর।

Ø জিডিপির হিসাব বহিভর্‚ত বিষয়াদি : জিডিপি গণনার ক্ষেত্রে যেসব উপাদানসমূহ কখনও অন্তর্ভুক্ত করা হয় না, তা হচ্ছে : ১. মূলধন লাভ-ক্ষতি, ২. মাধ্যমিক দ্রব্য ও সেবা, ৩. বিনামূল্যে ব্যবহৃত দ্রব্য ও সেবা, ৪. অতীতে উৎপাদিত পণ্য ও লেনদেন বিবেচ্য নয়, ৫. সরকারি ঋণের সুদ ও ৬. বেআইনি কাজ।

Ø বাংলাদেশে জাতীয় আয় পরিমাপ পদ্ধতি : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো উৎপাদন পদ্ধতি ও ব্যয় পদ্ধতি ব্যবহার করে এউচ ও এঘও গণনা করে। উৎপাদন পদ্ধতিতে মোট দেশজ উৎপাদ (এউচ) পরিমাপের জন্য অর্থনীতিকে মোট ১৫টি প্রধান খাতে বিভক্ত করা হয়। খাতসমূহ হচ্ছে : ১. কৃষি ও বনজ সম্পদ; ২. মৎস্য সম্পদ; ৩. খনিজ ও খনন; ৪. শিল্প (ম্যানুঃ); ৫. পাইকারি ও খুচরা বিপণন; ৬. বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সম্পদ; ৭. নির্মাণ; ৮. হোটেল ও রেস্তোরাঁ; ৯. পরিবহন, সংরক্ষণ ও যোগাযোগ; ১০. আর্থিক প্রাতিষ্ঠানিক সেবা; ১১. রিয়েল এস্টেট, ভাড়া ও অন্যান্য ব্যবসা; ১২. লোক প্রশাসন ও প্রতিরক্ষা; ১৩. শিক্ষা; ১৪. স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা ও ১৫. কমিউনিটি, সামাজিক ও ব্যক্তিগত সেবা।

· একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে একটি দেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে যে পরিমাণ  ‍চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবা উৎপাদিত হয় তার বাজার দামকে- GDP বলে।

· মোট দেশজ উৎপাদের সাথে নীট আয় যোগ করলে- মোট জাতীয় আয় পাওয়া যায়।

· অর্থনীতিতে চূড়ান্ত পর্যায়ের দ্রব্য ও সেবার আর্থিক মূল্য থেকে মূলধন ব্যবহারজনিত অপচয় বাদ দিলে- নীট জাতীয় আয় পাওয়া যায়।

· GNI- এর পূর্ণরূপ- Gross National Income.

· NNI- এর পূর্ণরূপ- Net National Income.

· CCA- এর পূর্ণরূপ- Capital Consumption Allowance.

· GDP -এর পূর্ণরূপ- Gross Domestic product.

· জাতীয় আয় পরিমাপ করা যায়- ৩ ভাবে।

· উৎপাদন কার্যে ব্যবহৃত উপকরণসমূহ হতে প্রাপ্ত আয়ের সমষ্টিকে বলে- আয় পদ্ধতি।

· আয় পদ্ধতিতে জাতীয় আয়- খাজনা + মজুরি + সুদ + মুনাফা।

· বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিভক্ত করা হয়- ১৫টি খাতে।

· একটি নির্দিষ্ট সময়ের সমাজের সব ধরনের ব্যয়ের সমষ্টি দিয়ে জাতীয় আয় নির্ধারণ করাকে- ব্যয় পদ্ধতি বলে। মাথাপিছু এউচ বলতে- জনপ্রতি বার্ষিক এউচ কে বোঝায়।

· কোনো নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে দেশের মোট উৎপাদনকে ঐ দেশের মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে- মাথাপিছু দেশজ উৎপাদ পাওয়া যায়।

· মাথাপিছু আয় = কোনো নির্দিষ্ট বছরে মোট দেশজ উৎপাদন/ঐ সময়ে মোট জনসংখ্যা 

· ভূমি, শ্রম, মূলধন হলো- দেশজ উৎপাদের নির্ধারক।

· একটি দেশ উন্নত না অনুন্নত তা বোঝা যায়- মাথাপিছু জিডিপি দ্বারা।

· GDP -এর নির্ধারক হলো- ৫টি।     

· ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ- মোট দেশজ উৎপাদে গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক।

· মোট দেশজ উৎপাদের বৃদ্ধির মৌলিক নির্ধারক হলো- মূলধন।

· উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশসমূহ মোট জাতীয় আয় বৃদ্ধি করতে পারে না- মূলধনের অভাবে।

· মোট দেশজ উৎপাদ বহুলাংশে নির্ভর করে- প্রযুক্তির ওপর।

· মাধ্যমিক দ্রব্য বা সেবা- জাতীয় আয়ে অন্তর্ভুক্ত হয় না।

· বিনামূল্যে ব্যবহৃত দ্রব্য ও সেবা- জিডিপিতে হিসাব হয় না।

· সরকারি ঋণের সুদ- জিডিপিতে হিসাব হয় না।

· বেআইনি কার্যকলাপ হতে প্রাপ্ত আয়- জিডিপিতে হিসাব হয় না।

· অতীতে উৎপাদিত দ্রব্য ও লেনদেন জিডিপিতে হিসাব করলে- দ্বৈত গণনার সমস্যা দেখা যায়।

· মোট দেশজ উৎপাদ পরিমাপের জন্য অর্থনীতিকে- ১৫টি খাতে বিভক্ত করা হয়।

· সকল শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের বাজার মূল্য হিসাব করে- মোট দেশজ উৎপাদ বের করা যায়।

· কৃষিজ ও বনজ খাতের উপখাত- ৩টি।

· বনখাতের উপকরণের তথ্যের অভাবে মোট উৎপাদন হতে- ৩% মূল্য বাদ দিতে হয়।

· পরিবহন খাতের বড় অংশ- বেসরকারি খাতে রয়েছে।

· বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে মোট দেশজ উৎপাদ হিসাব করা হয়- ব্যয় পদ্ধতিতে।

 সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন:

1) জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি কয়টি?

উত্তর : জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি ৩টি।

2) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জিডিপি পরিমাপের জন্য অর্থনীতিকে কয়টি খাতে বিভক্ত করেছে?

উত্তর : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জিডিপি পরিমাপের জন্য অর্থনীতিকে ১৫টি খাতে বিভক্ত করেছে।

3) কৃষি ও বনজ সম্পদ খাতকে কয়টি উপখাতে বিভক্ত করা হয়েছে?

উত্তর : কৃষি ও বনজ সম্পদ খাতকে ৩টি উপখাতে বিভক্ত করা হয়েছে।

4) CCA -এর পূর্ণরূপ কী?

উত্তর : CCA -এর পূর্ণরূপ Capital Consumption Allowance.

5) মোট দেশজ উৎপাদের সাথে নিট উৎপাদন আয় যোগ করলে কী পাওয়া যায়?

উত্তর : মোট দেশজ উৎপাদের সাথে নিট উৎপাদন আয় যোগ করলে জাতীয় আয় পাওয়া যায়।

6) একটি দেশের উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মানের প্রধান সূচক কী?

উত্তর : একটি দেশের উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মানের প্রধান সূচক জিডিপি।

7) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জিডিপি ও জিএনআই গণনা করার ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে?

উত্তর : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জিডিপি ও জিএনআই গণনা করার ক্ষেত্রে উৎপাদন ও ব্যয় পদ্ধতি ব্যবহার করে।

8) উৎপাদন পদ্ধতিকে কীভাবে মোট দেশম উৎপাদ হিসাব করা হয়।

উত্তর : উৎপাদন পদ্ধতিতে খাতওয়ারি উৎপাদনের মূল্য নির্ধারণ করে মোট দেশজ উৎপাদ হিসাব হয়। একটি দেশের অর্থনীতি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিভক্ত থাকে। এসব খাতে এক বছরে উৎপাদিত চ‚ড়ান্ত দ্রব্য ও সেবার মূল্য যোগ করে মোট দেশজ উৎপাদ নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মোট ১৫টি খাতের উৎপাদনের মূল্য যোগ করে মোট দেশজ উৎপাদ নির্ধারণ করা হয়।

9) সচলতা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর : অর্থনীতিতে সচলতা বলতে পিছিয়ে পড়া অর্থনৈতিক কার্যকলাপ থেকে সম্পদ প্রসারমান অর্থনৈতিক কার্যকলাপে সরিয়ে নেওয়ার বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়। বিভিন্ন কারণে ব্যবসায় বা উৎপাদনে ক্ষতি হতে পারে এবং চাহিদাও কমে যেতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা প্রসারমান এবং লাভজনক কোনো ব্যবসায় তাদের অর্থসম্পদ বিনিয়োগ করেন। এটিই মূলত সচলতা বৈশিষ্ট্য।

10) বেআইনি আয় মোট দেশজ উৎপাদের হিসাব বহির্ভূত কেন?

উত্তর : বেআইনি আয় সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং দেশের প্রচলিত আইনের বিরোধী মোট দেশজ উৎপদের হিসাব বহির্ভূত। অপরাধমূলক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড সমাজ কখনই গ্রহণ করে না। প্রচলিত আইনে এ ধরনে কর্মকাণ্ড শাস্তিযোগ্য। সমাজে এ ধরনের কর্মকাণ্ড নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। এ কারণে জাতীয় আয় গণনার ক্ষেত্রে বেআইনি আয় সবসময় মোট দেশজ উৎপাদের হিসাব বহিভর্‚ত।

11) প্রযুক্তির ওপর জিডিপি বহুলাংশে নির্ভর করে কেন?

উত্তর : প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় বলে প্রযুক্তির ওপর জিডিপি বহুলাংশে নির্ভর করে। প্রযুক্তির উন্নয়ন নানাভাবে হতে পারে। যেমন- নতুন আবিষ্কার, যন্ত্রপাতির ডিজাইন ও দক্ষতার উন্নতি, নতুন মালামালের আবিষ্কার ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ, কৃষি খাতে চিরায়ত বীজের পরিবর্তে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বীজ ব্যবহার করে ধানের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ওপর জিডিপি অনেকাংশে নির্ভর করে।

12) মোট জাতীয় আয় বলতে কী বোঝায়?

উত্তর : কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশের নাগরিকগণ কর্তৃক যে পরিমাণ চ‚ড়ান্ত দ্রব্য ও সেবা উৎপন্ন হয় তার বাজার মূল্যের সমষ্টিকে মোট জাতীয় আয় (GNI) বলে। মোট দেশজ উৎপাদের সাথে নিট উপাদান আয় যোগ করে মোট জাতীয় আয় পাওয়া যায়। নিট উপাদান আয় বলতে একটি দেশের নাগরিকগণ বৈদেশিক বিনিয়োগ থেকে ও শ্রম থেকে যে আয় করে এবং বিদেশি নাগরিকগণ আলোচ্য দেশে বিনিয়োগ ও শ্রম থেকে যে আয় করে এ দুয়ের বিয়োগফলকে বোঝায়। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন

Ads

Ads