৮ম শ্রেণির একাদশ অধ্যায়-তথ্য ও উপাত্ত
তথ্য ও উপাত্ত
১) তথ্য ও উপাত্ত কী?
তথ্য হলো সহায়কভিত্তিক কোনো ঘটনা বা সংখ্যা, আর উপাত্ত হলো সেই তথ্য নির্দেশক সংখ্যা।
২) পরিসংখ্যান কীভাবে গঠিত হয়?
তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান গঠিত হয় এবং তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।
৩) অপরিব্যক্ত উপাত্ত কী? উদাহরণ দাও।
যে উপাত্তে মানের কোনো আলোচনা নেই, তাকে অপরিব্যক্ত উপাত্ত বলে। উদাহরণ: ৪২, ৪৫, ২০, ৩০, ৫০।
৪) উপাত্ত থেকে তথ্য কীভাবে পাওয়া যায়?
সংরক্ষিত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তথ্য পাওয়া যায়।
৫) পরিসংখ্যানের মাধ্যমে কী করা যায়?
পরিসংখ্যানের মাধ্যমে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গাণিতিক সূত্রের সাহায্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
৬) গণসংখ্যা নিবেশন সারণি (Frequency Distribution Table) কী?
গণসংখ্যা নিবেশন সারণি হলো এমন একটি সারণি যেখানে উপাত্তের বড় সংখ্যাগুলোকে শ্রেণিভাগ করে সাজানো হয়, যাতে তথ্য সহজে বিশ্লেষণ করা যায়।
৭) গণসংখ্যা সারণি তৈরির প্রধান ধাপ কয়টি?
চারটি ধাপ:
(১) পরিসর নির্ণয়
(২) শ্রেণিবিভাগ নির্ধারণ
(৩) শ্রেণিব্যাপ্তি নির্ণয়
(৪) ট্যালি চিহ্ন দিয়ে গণসংখ্যা নির্ণয়।
৮) পরিসর (Range) কী?
উপাত্তের সর্বোচ্চ মান ও সর্বনিম্ন মানের পার্থক্যই পরিসর।
সূত্র: পরিসর = (সর্বোচ্চ সংখ্যা – সর্বনিম্ন সংখ্যা) + ১
৯) শ্রেণিবিভাগ (Class Interval) কী?
উপাত্তকে সুসংগঠিতভাবে ভাগ করার জন্য যে ভাগ বা গ্রুপ তৈরি করা হয় তাকে শ্রেণিবিভাগ বলে।
১০) ট্যালি চিহ্ন (Tally mark) কী?
কোনো শ্রেণিতে কয়টি মান পড়েছে তা গণনার জন্য ব্যবহৃত |||| বা ট্যালি চিহ্ন।
১১) গণসংখ্যা (Frequency) কী?
একটি নির্দিষ্ট শ্রেণিতে মোট কতটি উপাত্ত পড়েছে, সেই সংখ্যাই গণসংখ্যা।
১২) পরিসর নির্ণয়ের উদাহরণ কীভাবে করা হয়?
ধরা যাক সর্বোচ্চ মান = ২৫, সর্বনিম্ন মান = ১০
তাহলে পরিসর = (২৫ – ১০) + ১ = ১৬
১৩) কেন শ্রেণিবিভাগ সমান রাখা হয়?
সহজ গণনা ও বিশ্লেষণের সুবিধার জন্য প্রায় সব শ্রেণির প্রস্থ সমান রাখা হয়।
১৪) শ্রেণির সংখ্যা কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?
পরিসরকে শ্রেণি ব্যবধান দিয়ে ভাগ করলে শ্রেণির সংখ্যা পাওয়া যায়।
১৫) শ্রেণি ব্যবধান (Class interval) কী?
পরপর নির্দিষ্ট সীমার মধ্যকার উপাত্তকে একত্রে নিয়ে যে ভাগ তৈরি করা হয়, তাকে শ্রেণি ব্যবধান বলে।
যেমন: ২০–২৪, ২৫–২৯ ইত্যাদি।
১৬) লেখচিত্র (Diagram) কী?
তথ্য ও উপাত্তকে দৃশ্যমান আকারে উপস্থাপন করাকে লেখচিত্র বলে।
১৭) লেখচিত্র কেন ব্যবহার করা হয়?
কারণ এতে উপাত্ত সহজে বোঝা যায় ও তুলনা করা যায়।
১৮) আয়তচিত্র বা আয়তলেখ (Histogram) কী?
গণসংখ্যা নিবেশন সারণির ভিত্তিতে আঁকা লেখচিত্রকে আয়তচিত্র বা আয়তলেখ বলে; যেখানে
- X-অক্ষ → শ্রেণিবিভাগ,
- Y-অক্ষ → গণসংখ্যা দেখায়।
১৯) আয়তচিত্রে কোন কোন অক্ষ ব্যবহার হয়?
X-অক্ষ এবং Y-অক্ষ।
২০) কেন আয়তচিত্রে ফাঁকা রাখা যায় না?
কারণ শ্রেণিবিভাগ পরপর যুক্ত থাকে এবং ধারাবাহিক উপাত্ত দেখাতে ফাঁকা রাখা উচিত নয়।
২১) আয়তচিত্র আঁকার ধাপ কী?
১. X-অক্ষে শ্রেণিবিভাগ বসানো
২. Y-অক্ষে গণসংখ্যা বসানো
৩. প্রতিটি শ্রেণির জন্য গণসংখ্যা অনুযায়ী আয়তক্ষেত্র আঁকা।
২২) গণসংখ্যা নিবেশন সারণির মোট (Total) কী বোঝায়?
সকল শ্রেণির সমস্ত গণসংখ্যার যোগফল।
২৩) ট্যালি চিহ্ন থেকে গণসংখ্যা কীভাবে পাওয়া যায়?
ট্যালি চিহ্নগুলো গুনে সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়।
২৪) পরিসংখ্যানে উপাত্ত কেন সারণিতে সাজানো হয়?
উপাত্ত সহজে বোঝা, গণনা ও তুলনা করার জন্য।
২৫) একটি আয়তচিত্রে আয়তক্ষেত্রের প্রস্থ কী দ্বারা নির্ধারিত হয়?
শ্রেণিবিভাগ বা শ্রেণিপ্রস্থ (Class width) দ্বারা।
২৬) শ্রেণিবিভাগ সমান না হলে কী হয়?
আয়তচিত্র সঠিকভাবে তৈরি করা যায় না; তুলনা করা কঠিন হয়।
২৭) শ্রেণি ব্যাপ্তি ২০–২৪ এর সীমা কত?
সর্বনিম্ন = ২০
সর্বোচ্চ = ২৪
২৮) আয়তচিত্রে X-অক্ষ এবং Y-অক্ষে কী দেখানো হয়?
- X-অক্ষ: শ্রেণিবিভাগ
- Y-অক্ষ: গণসংখ্যা
২৯) পাইটচিত্র (Pie Chart) কী?
উত্তর: যখন কোনো উপাত্তকে বৃত্তাকার চিত্রের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়, তখন তাকে পাইচিত্র বলে।
৩০) পাইটচিত্র মোট কত ডিগ্রি নিয়ে তৈরি হয়?
মোট ৩৬০০ কোণ নিয়ে।
৩১) পাইটচিত্র কেন ব্যবহার করা হয়?
যেকোনো উপাত্তের বিভিন্ন অংশের অনুপাত এক নজরে বোঝানোর জন্য।
৩২) পাইটচিত্রের অন্য নাম কী?
বৃত্তচিত্র।
৩৩) পাইটচিত্রে কোণ বের করার সূত্র কী?
৩৪) আয়তচিত্রে আয়তক্ষেত্রগুলোর মাঝে ফাঁকা রাখা হয় না কেন?
কারণ শ্রেণিগুলো ধারাবাহিক এবং পরপর যুক্ত থাকে।
৩৫) পাইটচিত্রে প্রতিটি অংশ কী নির্দেশ করে?
উপাত্তের মোট পরিমাণের আনুপাতিক অংশ নির্দেশ করে।
৩৬) বৃত্তের কেন্দ্রে সৃষ্ট মোট কোণ কত ডিগ্রি?
উত্তর: ৩৬০০
৩৭) পাইচিত্রে প্রতিটি অংশের মান কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
উত্তর: ৩৬০০ এর অংশ হিসেবে।
৩৮) পাইচিত্রে কোনো নির্দিষ্ট উপাত্তের জন্য কোণ নির্ণয়ের সূত্রটি লেখ।
উত্তর: নির্ণেয় কোণ = ×৩৬০০
৩৯) উপাত্ত উপস্থাপনে পাইচিত্র ব্যবহারের সুবিধা কী?
উত্তর: পাইচিত্রের মাধ্যমে উপাত্ত উপস্থাপন করলে তা বোঝা সহজ হয় এবং দেখতে চিত্তাকর্ষক হয়।
৪০) মোট রান ২৪০ হলে, ৬৬ রানের জন্য পাইচিত্রে কোণের পরিমাণ কত হবে?
উত্তর: ৩৬০০= ৯৯০
৪১) মোট রান ২৪০ হলে, ১০ রানের জন্য কেন্দ্রীয় কোণ কত?
উত্তর: ৩৬০০= ১৫০
৪৩) মোট মৃতের সংখ্যা ১২০০ এবং বাস দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৪৫০ হলে, বাস দুর্ঘটনার জন্য সৃষ্ট কোণটি কত?
উত্তর: ৩৬০০= ১৩৫০
৪৪) ১২০০ জন মৃতের মধ্যে ট্রাক দুর্ঘটনায় ৩৫০ জন মারা গেলে, এর জন্য পাইচিত্রে কত ডিগ্রি কোণ হবে?
উত্তর: ৩৬০০= ১০৫০
৪৫) নৌযান দুর্ঘটনায় ১৫০ জন মারা গেলে (মোট ১২০০ জনের মধ্যে), পাইচিত্রে এর কোণের মান কত?
উত্তর: ৩৬০০= ৪৫০
৪৬) মোট উপাত্তের পরিমাণ দেওয়া থাকলে এবং পাইচিত্রে কোণের মান জানা থাকলে, নির্দিষ্ট উপাত্তের সংখ্যা বের করার নিয়ম কী?
উত্তর: ঐকিক নিয়ম বা নিচের সূত্রটি ব্যবহার করতে হয়:
নির্ণেয় সংখ্যা = ×প্রদত্ত কোণ
৪৭) দুর্ঘটনায় মোট মৃত ৪৫০ জন এবং নারীর জন্য নির্দেশিত কোণ ৮০০ হলে, নারীর সংখ্যা কত?
উত্তর:
৪৮) ৩৬০০ কোণ উপাত্তের কত অংশ নির্দেশ করে?
উত্তর: সম্পূর্ণ বা মোট উপাত্ত নির্দেশ করে।
৪৯) উপাত্তসমূহকে মানের ক্রমানুসারে সাজালে সেগুলো কোথায় পুঞ্জীভূত হতে চায়?
উত্তর: মাঝামাঝি বা কেন্দ্রের মানের দিকে।
৫০) কেন্দ্রীয় প্রবণতা (Central Tendency) কাকে বলে?
উত্তর: মাঝামাঝি বা কেন্দ্রের মানের দিকে উপাত্তসমূহের পুঞ্জীভূত হওয়ার প্রবণতাকে কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলে।
৫১) কেন্দ্রীয় মান উপাত্তসমূহের কী হিসেবে কাজ করে?
উত্তর: উপাত্তসমূহের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংখ্যা হিসেবে।
৫২) কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ কয়টি?
উত্তর: ৩টি।
৫৩) কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপগুলো কী কী?
উত্তর:
১. গাণিতিক গড় বা গড় (Arithmetic Mean)
২. মধ্যক (Median)
৩. প্রচুরক (Mode)
৫৪) উপাত্তের মানগুলো অবিন্যস্ত থাকলে প্রথমে কী করতে হয়?
উত্তর: মানের ঊর্ধ্বক্রম (ছোট থেকে বড়) বা অধঃক্রম (বড় থেকে ছোট) অনুসারে সাজাতে হয়।
৫৫) গাণিতিক গড় কাকে বলে?
উত্তর: উপাত্তসমূহের সংখ্যাসূচক মানের সমষ্টিকে যদি উপাত্তসমূহের মোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হয়, তবে তাকে গাণিতিক গড় বলে।
৫৬) গাণিতিক গড় নির্ণয়ের সাধারণ সূত্রটি লেখ।
৫৭) (সিগমা) চিহ্নটি কোন ভাষার অক্ষর এবং এটি দ্বারা কী বোঝানো হয়?
উত্তর: এটি একটি গ্রিক অক্ষর। পরিসংখ্যান বা গণিতে এটি দ্বারা 'সমষ্টি' বা 'যোগফল' বোঝানো হয়।
৫৮) গাণিতিক গড়ের সূত্রে n বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: উপাত্তসমূহের মোট সংখ্যা।
৫৯) ২০ জন শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের সমষ্টি ৭১৫ হলে, তাদের নম্বরের গাণিতিক গড় কত?
উত্তর: ৩৫.৭৫।
৬০) উপাত্তের সংখ্যা খুব বেশি হলে গড় নির্ণয়ের কোন পদ্ধতিটি সুবিধাজনক?
উত্তর: সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি।
৬১) সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে গড় নির্ণয়ের জন্য প্রথমে কী অনুমান করে নিতে হয়?
উত্তর: একটি অনুমিত গড় (Assumed Mean)।
৬২) সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে 'a' প্রতীকটি দ্বারা কী প্রকাশ করা হয়?
উত্তর: অনুমিত গড় (Assumed Mean)।
৬৩) অনুমিত গড় থেকে প্রতিটি সংখ্যার বিয়োগফল ধনাত্মক না ঋণাত্মক হবে তা কীসের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর: সংখ্যাটি অনুমিত গড় থেকে বড় হলে বিয়োগফল ধনাত্মক এবং ছোট হলে ঋণাত্মক হবে।
৬৪) গড় নির্ণয়ে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি ব্যবহারের প্রধান সুবিধা কী?
উত্তর: বড় সংখ্যার জটিল যোগফল নির্ণয়ের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমে এবং সময় সাশ্রয় হয়।
৬৫) বিন্যস্ত উপাত্তের গাণিতিক গড় নির্ণয়ের সূত্রটি কী?
৬৬) সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে গড় নির্ণয়ে ‘a’ দ্বারা কী বোঝানো হয়?
উত্তর: অনুমিত গড় (Assumed mean)।
৬৭) শ্রেণি মধ্যমান নির্ণয়ের সূত্রটি কী?
উত্তর: শ্রেণি মধ্যমান =
৬৮) ৮, ১২, ১৬, ১৭, ২০ সংখ্যাগুলোর গড় কত?
উত্তর: ১৪.৬।
৬৯) উপাত্তের সংখ্যা (n) জোড় হলে মধ্যক নির্ণয়ের সূত্র কী?
উত্তর: মধ্যক} =
৭০) উপাত্তের সংখ্যা (n) বিজোড় হলে মধ্যক নির্ণয়ের সূত্র কী?
উত্তর: মধ্যক = তম পদের মান
৭১) ১০, ১২, ১৪, ১৮, ১৯, ২৫ সংখ্যাগুলোর মধ্যক কত?
উত্তর: ১৬।
৭২) বিন্যস্ত উপাত্তের ক্ষেত্রে মধ্যক নির্ণয়ে কোন সারণিটি প্রয়োজন হয়?
উত্তর: ক্রমযোজিত গণসংখ্যা (Cumulative Frequency) সারণি।
৭৩) প্রচুরক কী?
উত্তর: প্রদত্ত উপাত্তের মধ্যে যে সংখ্যাটি সর্বাধিক বার থাকে, তাকে প্রচুরক বলে।
৭৪) ৬, ১২, ৭, ১২, ১১, ১২, ১১, ৭, ১১ এর প্রচুরক কোনটি?
উত্তর: ১১ ও ১২।
(ব্যাখ্যা: ১১ এবং ১২ উভয় সংখ্যাই সর্বোচ্চ ৩ বার করে আছে)
৭৫) কোনো উপাত্তে যদি কোনো সংখ্যাই একাধিকবার না থাকে, তবে প্রচুরক কত?
উত্তর: প্রচুরক নেই।
(ব্যাখ্যা: সারণিতে সর্বোচ্চ গণসংখ্যা ২০, যা ৭১-৮৫ শ্রেণিতে অবস্থিত। তাই এই শ্রেণির নিম্নসীমা ৭১)
৭৬) একটি শ্রেণিতে যতগুলো উপাত্ত অন্তর্ভুক্ত হয় তার নির্দেশক নিচের কোনটি?
উত্তর: শ্রেণির গণসংখ্যা।
৭৭) ৪১-৫৫, ৫৬-৭০ ... সারণিতে উপাত্তগুলোর শ্রেণিব্যাপ্তি কত? (চিত্র-১৪ এর ৬ নং প্রশ্ন)
উত্তর: ১৫। (হিসাব: ৫৫ - ৪১ + ১ = ১৫)
৭৮) ৫৬-৭০ শ্রেণির শ্রেণি মধ্যমান কোনটি?
উত্তর: = ৬৩
৭৯) ক্রমযোজিত গণসংখ্যা কী কাজে লাগে?
উত্তর: মূলত মধ্যক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এবং অজিভ রেখা (Ogive curve) অঙ্কনে।





